জওহরলাল নেহেরু: দেশ ভাগ ও একটি অসমাপ্ত প্রেম কাহিণী
যদিও ভারত উপমহাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই ভারত উপমহাদেশ ভাগের প্রস্তাবে প্রথমে খুবই রাগান্বিত হয়েছিলেন তবুও একটা সময়ে তিনি ভারত ভাগ করতে ঠিকই রাজী হয়েছেন। আসলে কি এমন হয়েছিলো যার ফল স্বরূপ উনি দেশ ভাগের জন্য অবশেষে রাজী হয়েছিলেন?
নেপথ্যে কারন খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছুদিন কিছু নির্ভরশীল ওয়েবসাইট থেকে তথ্য যা পেলাম তাতে অবাক যতটা হয়েছি, তার চেয়ে ও বেশি আবেগে ভেসেছি! ভাবছেন কিসের সাথে কি, কথা বলছি জওহরলাল নেহেরুর দেশভাগের ব্যাপারে এখানে আমার আবেগ ভালোবাসা আসে কীভাবে?
আসে আসে, পুরোটা জানলে আপনার এই আবেগ আরো বেশী আসবে।
দেশভাগের নেপথ্যে জুড়ে পুরোটাই ছিলো লেডি মাউন্টব্যাটেন এর কৃতিত্ব ( মাওলানা আজাদ এরকমই আভাস দিয়েছেন বেশ কিছু জায়গায়)। লেডি মাউন্টব্যাটেন ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্না মহিলা । তিনি তার সুমধুর বাচনভঙ্গি দিয়ে সহজেই সবাইকে কনভিন্স করে নিতে পারতেন যে কোন বিষয় নিয়ে।
পাশাপাশি তিনি তার স্বামীকে ও প্রচণ্ড ভক্তি সম্মান করতেন। তাই স্বামী লর্ড মাউন্টব্যাটেন যখন কোনভাবেই নেহরুকে আর রাজী করাতে পারছিলেন না দেশভাগের ব্যাপারে, স্ত্রী লেডি মাউন্টব্যাটেন স্বামীকে সাহায্যে করার জন্য এগিয়ে আসেন এবং নেহরুকে দিনের পর দিন সময় নিয়ে রাজী করানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
তার চেয়েও বড় কথা হলো, এক দুর্লভ প্রেম আর অসীম ভালোবাসায় মজেছিলেন লেডি মাউন্টব্যাটেন তৎকালীন স্মার্ট,ড্যাসিং এবং প্রচন্ড মেধাবী জওহরলাল নেহরুর প্রতি। মন দেয়া ও নেয়ায় নেহরু ও কম কিছু ছিলেন না, ব্রিটেন এর এই সুন্দরী বঁধু নেহরুর হৃদয় মাজারেও নিজের আসন বেশ পাকাপোক্ত করে রেখেছিলেন।
লেডি মাউন্টব্যাটেন এর সমস্ত কথা নেহরু খুব গুরুত্বসহকারে মেনে নিতেন। আর এজন্যই দেশভাগের পক্ষ্যে নিজের বিরোধী অবস্থান ও হঠাৎ করেই পরিবর্তন করে ফেলেন।
নেহরু এবং লেডি মাউন্টব্যাটেন, এই দুজনের ভালোবাসা এতোটাই গভীর আর অপার্থিব ছিলো যে, অনেকেই রুপক অর্থে বলে থাকেন-
"নেহেরুর হৃদয় টা চিড়ে একবার যদি দেখো, শুধু লেডি মাউন্টব্যাটেন এর নামটাই লিখা দেখবে"
লেডি মাউন্টব্যাটেন, যার প্রভাব অথবা পরামর্শে জওহরলাল নেহেরু এই প্রকান্ড উপমহাদেশ খানা বিভক্ত করতে রাজী হয়েছিলেন, উনি আসলে কে ছিলেন? কীভাবে এই দুজনের প্রেমকাহিনী রাজনীতির এর ভয়াল স্ক্যান্ডাল থেকে গা বাঁচিয়ে দিব্যি ইতিহাসের পবিত্রতম এক স্থানে আলাদা স্থান করে নিয়েছে? আর কিই বা ছিলো এই প্রেমকাহিনীর শেষ পরিণতি? জানতে চান পাঠক?
আপনি যখন সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়ে শেষ করবেন এক বারের জন্যেও আপনার মনে হবেনা এই প্রেম কাহিনীর জন্য এপার ওপার দেশভাগ হয়ে গেলো, আমরা হিন্দু -মুসলিম ভাই ভাই সব আলাদা হয়ে গেলাম। ইসস! কি জঘন্য প্রেম ছিলো! বরংচ আমার মত আপনিও বুদ হয়ে থাকবেন ভালোবাসার অন্য এক জগতে!
লেডি মাউন্টব্যাটেন এবং জওহরলাল নেহরু
সুন্দরী লেডি মাউন্টব্যাটেন এক ইহুদি অভিজাত ব্যাংকারের নাতনী ছিলেন। একাধারে গ্ল্যামারগার্ল এবং ভয়ঙ্কর সুন্দরী এই ভদ্রমহিলার আসল নাম হচ্ছে এডুইনা অ্যাশল।উনার কিন্তু আরেকটি সেই লেভেলের পরিচয় আছে। উনি স্বয়ং রানী ভিক্টোরিয়ার একজন সম্মানিত বংশধর ছিলেন।
ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ওরফে ডিকি ছিলেন তার স্বামী।
বলা বাহুল্য, বিয়ের পরেও বেশ কিছু বিতর্কিত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এডুইনা। এবং জওহরলাল নেহরু ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম এবং শেষ সদস্য।
যদিও বিভিন্ন পুরুষ এসেছিলেন এডুইনের জীবনে, নেহরুর সাথে পরিচয় হবার পর জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি উনি নেহরুতেই বুদ হয়েছিলেন।
এডুইনা যার অন্তিম সমাধি হয়েছিলো সাগরের বুকে, ভাবতে অবাক লাগে কীভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরুর পুরোটা হৃদয় জুড়ে!
গোটা ভারতবর্ষ কে টুকরো করার জন্য লেডি মাউন্টব্যাটেন যখন দিনের পর দিন নেহরুকে রাজি করানোর ব্যাপারে নিজের স্বীয় প্রভাব খাটিয়ে গেছেন, পাশাপাশি নিজের প্রেমের এক রহস্যময় এবং অপার্থিব ভালোবাসার মহলও রচনা করে নিয়েছিলেন তার প্রেমিক পুরুষ নেহরুর মনে।
বিপত্নীক নেহরু প্রতিজ্ঞাই করে নিয়েছিলেন তিনি আর কখনো বিয়ে করবেন না। ওদিকে তার একমাত্র মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী ও ব্যস্ত হয়ে পরেছিলেন স্বামী সন্তান নিয়ে। সারাদিন কংগ্রেস কংগ্রেস করে জীবন কাটানো নেহরুর মনের সঙ্গী না থাকার যে অভাব তখন ছিলো,বস্তুতঃ এই অভাব পুরনের লক্ষ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সাপোর্ট হয়ে ছিলেন এই এডুইনা।
লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর জীবনের বিনিময়ে অথবা কোটির উপরে মানুষের দেশান্তরী এবং ঘরবাড়ি ছাড়া হওয়ার পেছনে মাওলানা আজাদ একটা কারনকেই হাইলাইট করেছেন , আর তা হলো নেহরু-এডুইনার গোপন প্রেম। গোপন, এবং অপ্রাপ্তির প্রেম। যেই প্রেম আকাশের চাঁদ আর তারার মত পাশাপাশি রয়ে গেছে সারাটি জীবন। কিন্তু বাস্তবে মিলিত হয়নি কোন কালে।
শুরুটা কীভাবে হয়েছিলো?
এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এডুইনা এবং নেহেরু ভারতে তাদের প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকেই একে অপরকে পছন্দ করা শুরু করেছিলেন। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, লর্ড ম্যাউন্টব্যাটেন ওরফে ভারতের শেষ ভাইসরয় ডিকি এই সম্পর্কে কোন বাধা হয়ে দাড়ান নি?
মজার ব্যাপার হলো না, তিনি এ সম্পর্কে কোনরকম বাধা সৃষ্টি করেন নি। বরংচ নেহেরুর সাথে যতটা সময় এডুইনা থাকতেন ডিকি খুবই নিশ্চিন্ত থাকতেন বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।
যাই হোক,, ম্যাশোবরা পাহাড়ি স্টেশনে এই প্রেম উপাখ্যান এর শুরু। নেহরু পরিবার আর মাউন্টব্যাটেন পরিবার একসাথে পিকনিকে গিয়েছিলেন এই ম্যাশোবরা পাহাড়ি অঞ্চলে। সেখানেই নেহরু আর এডুইনা সবার অলক্ষ্যে পাহাড়ি আঁকাবাকা পথে নিজেদের মন বিনিময় করেন একে অপরের সাথে।
বলা হয়ে থাকে তাদের দুজনের এই প্রেম ছিলো আত্মা এবং মেধার এক ইউনিক কম্বিনেশন। এক দুর্লভ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন তারা দুজন। বিপত্নীক নেহরুর খালি হৃদয়ের আহাজারি যেন শুনতে পেয়েছিলেন এডুইনা এই হাজার মানুষের ভীরে থেকেও। আর তাইতো তিনি নিজেকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নেহেরুর দিকে। লিখেছিলেন চিঠি এমনটা করে-
"আজ সকালে যখন তুমি গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছিলে, তখন আমার খুব খারাপ লাগছিলো। তবে তুমি চলে গেলেও, আমাকে রেখে গিয়েছো এক অদ্ভুত প্রশান্তিময় অনুভুতিতে- তোমার মনেও কি আমি একই অনুভূতি জাগাতে পেরেছি?" সুত্রঃ রোর মিডিয়া।
নেহেরু এবং এডুইনা কেন একে অপরের প্রেমে মজেছিলেন?
দ্যা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত আয়েশা সিং নামক এক লেখিকার লিখা অনুযায়ী,
অনেক বিষয় ছিলো যার কারনে এ প্রেম কাহিনীর শুরু হয়েছিলো। শক্তিশালী শারীরিক আকর্ষণ, ভারত মায়ের প্রতি দুজনার ভালোবাসা, মহাত্না গান্ধীর প্রাণবিয়োগ , সংগীত, কবিতা, শিল্পের প্রতি দুজনার অগাধ টান এবং স্বাধীনতা অবধি ব্রিটিশ আর ভারতীয়দের মাঝে চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি ইত্যাদি তার মধ্যে অন্যতম।
হঠাৎ করে আততায়ীর হাতে গান্ধীজি মারা যাওয়ার পরে নেহরুর কাছের মানুষদের কাছ থেকে কিছুটা ইমোশনাল সাপোর্ট এর দরকার ছিলো যা দিয়েছিলেন এডুইনা। নেহেরু এডুইনার সাপোর্ট, সঙ্গ এতোটাই নির্ভার পছন্দ করতেন, অনেকেই সন্দেহ করেন নেহেরু খোদ নিজের গত হওয়া স্ত্রীর সাহচর্য ও অতটা ভালোবেসেছিলেন কিনা।
কি পরিনতি হয়েছিলো এই প্রেম কাহিনীরঃ
ব্রিটিশ শাসন শেষে মাউন্টব্যাটেন পরিবার তল্লিতাল্লা গুছিয়ে ফিরে যান ব্রিটেন এ নিজেদের বাড়ীতে। সেখানে গিয়েও টানা ১২ বছর এডুইনা এবং নেহরু যোগাযোগ রেখেছিলেন একে অপরকে চিঠি লিখে। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জ্যানেট মরগ্যান নিজে স্বাক্ষী ছিলেন নেহেরু এবং এডুইনার এইসব প্রেমপত্র বিনিময়ের।
১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এডুইনা যখন মারা যান, নেহেরুর চিঠিভর্তি এক বাক্স ছিলো তার বিছানায় যা তিনি উইল করে দিয়ে গেছিলেন স্বামী লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে। বর্তমানে এসব চিঠি সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির মাউন্টব্যাটেন সংরক্ষণাগারে কঠিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
যাই হোক, টানা বারো বছরে খুবই অল্প সময়ের জন্য দেখা হতো নেহরু আর এডুইনার। হয়তো নেহরু কোন সম্মেলনে লন্ডনে গেছেন, ওই সময় উনি এডুইনার সাথে দেখা করে আসতেন। তবে আগেই বলেছি তাদের চিঠি চালাচালির যোগাযোগ চালু ছিলো এডুইনা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
এডুইনা হঠাৎ করে মারা যাওয়ার পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে সমুদ্রের বুকে সমাহিত করা হয়। অপরদিকে এডুইনা মারা যাওয়ার চার বছর পরে ১৯৬৪ সালের ২৭মে নেহেরু ও হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। আর নেহরু মারা যাওয়ার পরে নেহরু- এডুইনা প্রেম কাহিনীর সলিল সমাপ্তি ঘটে।
পরিশেষে,
এত বড় একজন পলিটিক্যাল আইডল শুধুমাত্র তার ভালোবাসার জন্য গোটা দেশকে ভাগ করে এতোগুলো মানুষকে কত কষ্টের জীবন দিয়েছেন। চাইলেই বিরোধী দল অথবা রাজনৈতিক বিভিন্ন সমালোচক রা এই প্রেম কাহিনী কে নিয়ে অনেক রিউমার বা স্ক্যান্ডাল ছড়াতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবিক তা হয়নি। আর এজন্য মূলত কংগ্রেস এর সম্মিলিত কোন কার্যকরী এবং সুদুরপ্রসারি উদ্যোগ বড় ভুমিকা রেখেছিলো।
নেহরু- এডুইনার এই অসমাপ্ত প্রেম না পাওয়ার হাহাকারে শুধু তাদের নিজেদেরকেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরংচ পাঠক হিসেবে আমি বা আমার মত অজস্র মানুষও এক না-পাওয়া প্রেম ভালোবাসার আহজারিতে আবেশিত হয়ে থাকে ইয়া লম্বা একটা সময় ধরে।
আর এভাবেই দেশভাগের প্রভাবক এই অসমাপ্ত প্রেম যুগে যুগে ভালোবাসার রথ হয়ে ঠিকই উড়ে বেড়াবে হাজার মানুষের অন্তরে।
সীমান্ত
তোমরা শুধু একটা তারকাঁটা’ই দিলে সীমান্তে,
না দিতে পারলে বাধা মনে, না হৃদয়ে
না ভাষায়, না জবানে, না ধর্মে
না জীবনে, না মরণে ।
একই চাঁদ আমরা দেখি,
একই জোসনায় আমরা ভাসি ।
একই ভাষায় স্বপ্ন আমরা দেখি।
শীতের কূয়াশায় ডুবে যাই
নতুন সূর্যে জেগে উঠি,
শুধু একটা তারকাঁটা’ই দিলেই সীমান্তে।।
সূত্রঃ
- রোর মিডিয়া।
- দ্যা সিক্রেট হিস্টোরি অফ দ্যা এন্ড অফ এন এম্পায়ার ( রাইটারঃ এলেক্স ভন তুনযেইমান)।
- দ্যা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।