বন্ধু হে আমার !
এটা একটা সিরিজ গদ্য কবিতা, দুই বন্ধু'র দারুন রসায়নের কিছুক্ষণ এখানে তুলে ধরার প্রয়াস রইল আপনাদের কাছে, এখানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুই বন্ধু'র বিভিন্ন সময়ের কথোপকথন, আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে ।

পদ্মনীধি লেনের বাসায় “বকরি ঈদ”
(কোরবাণীর পশু দেখা পর্ব-ঈদের আগের দিন)
জানে জিগার মেহমুদ দূত মারফত খবর পাঠিয়েছে আমার কাছে ‘বকরি ঈদে’র আগের দিন
“বকরি ঈদে”র অতি প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ কোরবাণী’র পশু কেনা হয়ে গেছে -তা দেখে আসার আমন্ত্রণ!
কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইলেও কোরবাণী’র পশু দেখার আমন্ত্রণের অনেক কারণ আছে
যা হয়তো আমি না দেখলে জানতামই না কোন দিন।
‘বকরি ঈদে’র আগের দিন পড়ন্ত বিকেলে
আমি যখন মেহমুদের “পদ্মনীধি লেনে’’র বাসার সামনে দাড়ালাম
তখন দেখলাম পাড়ার সব ছেলেপেলে’রা বাসার সামনে জড়ো হয়েছে
আমি নানান আশংকা বুকে নিয়ে দাড়ালাম লাল ইটের দো’তালা বাসার’টার সামনে
দোতালা’র বারান্দা থেকে আমাকে দেখেই মেহমুদ একরকম ছুটে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো!
-কিরে বাসার সানে এত জটলা কিসের?
মেহমুদ হেসে বললো আর বলিস না, পাড়ার ছেলে পেলেরা কোরবাণীর পশু দেখতে বেরিয়েছে!
-আমি বোকার মত বলেই ফেললাম “এ আর দেখার কি আছে”? ওরা কি আগে কোরবাণী’র পশু দেখেনি?
মেহমুদ আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো চল,
তোকে আগে দেখিয়ে আনি- কোরবাণী’র পশু গুলো-
তারপর দুই ইয়ার মিলে দোতালায় বারান্দায় বসে চা-নাস্তা করা যাবে?
ভিড় ঠেলে আমাকে নিয়ে মেহমুদ ওদের বিশাল বাড়ীর ইট বিছানো রাস্তা ধরে উওর দিকে কোণায় গিয়ে যখন দাড়ালাম
-তখন আমি হতবিহবল হয়ে চেয়ে রইলাম!
আর আমার কিছুক্ষণ আগে করা প্রশ্নের জন্য নিজেই নিজের কাছে অনুতপ্ত হলাম!
-মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা ও করলাম মেহমুদের কাছে
মেহমুদ আমার মনোভাব বুঝতে পেরে বললো এ বছর ব্যবসা খারাপ রে আমাদের, না হলে আরো কয়েকটা পশু কেনার ইচ্ছে ছিলো?
-বলে কি ব্যাটা?
এত রীতিমত কোরবাণীর গরু-ছাগলের হাট বসিয়ে দিয়েছে বাসার ভেতরই!
বিরাট করে সামিয়ানা টাঙ্গানো -তার নীচে দাড়িয়ে সগৌরবে জাবর কাটছে তিনটা সাদা রংএর “মিরকাদিমের গরু”, পাহাড়ের মত উঁচু একটা অষ্ট্রেলিয়ান ষাঁড়, দুইটা হরিয়ানা ষাঁড়,পাশেই দাড়ানো তিনটা বেচারা মার্কা দেশী ষাঁড়, কোণায় একটা গাভী ও আছে দেখলাম!!
আর উল্টো দিকের কোণায় দাড়ানো সাতটি হৃষ্টপুষ্ট ছাগল অনবরত চেঁচাচ্ছে ম্যা-ম্যা বলে!!
আমি বিস্ময়ে বলে উঠলাম এগুলো সব তোরা কোরবাণী দিবি না অন্য কারো কোবাণী’র পশু আছে এখানে?
- আবারও একটা ভুল করে ফেললাম!!
মেহমুদ স্মিত হেসে বলে উঠলো নারে ব্যাটা এ গুলো আমারই কোরবাণী দেবো আমার দাদা –দাদী সহ পূর্ব পুরুষের নামে, বহু যুগের চল এটা আমাদের দাদার সময় তো সতোরা’টা মীর কাদিমের গরুই কোরবাণী হতো- এখন আর পারি না রে “ব্যাবসার অবস্থা খারাপ” বলে-
আমার মুখে আর কথা নেই!!
শোন তুই কাল সকাল সকাল ঈদের জামাত পরে আমাদের বাসায় চলে আসবি- কসাইটুলী’তে কসাই খবর দেওয়া আছে সব মিলিয়ে ওরা আসবে জনা বিশেক, এসে পড়িস যত তাড়াতাড়ি পারিস!
আমি ঘাড় কাৎ করলাম অসহায় ভঙ্গিতে-
তখন মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে –
“ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
আমরা দুই ইয়ার মসজিদের দিকে পা’বাড়ালাম।
(বকরি ঈদের দিন)
ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে নিজ আত্মীয় স্বজনের সাথে একটু দেখা সাক্ষাৎ করে
যখন মেহমুদের বাসার গিয়ে দাড়ালাম তখন বেলা দ্বিপ্রহর
মেহমুদ কে আগেই ছিলো বলা ইয়ার’ আসতে একটু দেরী’ই হবে আমার
আমি যখন ওদের বাড়ীর উঠান পেরিয়ে কোরবাণী’র স্থানে তখন ওদের কোরবাণী’র পশু গুলো জবাই হয়ে
মাংশ বানানো ও প্রায় শেষের দিকে
খানদানি মানুষের সবই প্রায় গোছানোই থাকে
চারিদিকে’র মানুষ দেখলেই বোঝাই যায় এরা এ কাজে অত্যান্ত দক্ষ কারিগর সব
না হলে এত গুলো পশু কোরবাণী করে স্বল্প সময়ে কার্য সমাধা করা চাট্রি খানি কথা না?
অবশ্য মেহমুদ আগেই বলেছিলো খুব ভোরেই ঈদের জামাত পড়ে তারা পশু কোরবাণী শুরু করে দেয়-
কেননা ওর বাবার নির্দেশই আছে দুপুরে কোরবাণীর মাংশ দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে একটা “ভাতঘুম” তাকে দিতেই হবে, অতএব তার আগেই সব কার্য শেষ করা চাই
তাদের ব্যাবসায়িক কর্মকান্ডে অনেক মানুষ অতএব তার এই চাওয়াটা অযৌক্তিক কিছু না!
সে যাই হোক-
মেহমুদ আমাকে দেখেই উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো “দোস্তো তুমি আইছো?”বলে দুই বন্ধু ঈদের মোলাকাত করি
আমার সামনে দাড়ানো-সাদা ধবধপে পান্জাবী- ও পায়জামা পড়া রোশনাই চেহারার মধ্য বয়েসী এক ভদ্রলোক বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন –আমার দিকে চোখ গেলেই আমি গিয়ে ‘কদমবুসি’ করতেই বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করলো স্মিত হেসে মেহমুদের বাবা, আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিভিন্ন দিক নির্দেশনা’র কাজে।
আমি কিছুসময়েই বুঝে গেলাম কোরবাণী’র নিয়মানুযায়ী তিন ভাগ করে মাংশ ‘বেটে’ দেওয়া হচ্ছে আর কাজ টি মেহমুদের বাবা ততোধিক আন্তরিকতার সাথে করছে তার বিভিন্ন অধীনস্থদের নিয়ে।
কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন বয়সী ছেলে এসে মেহমুদের বাবা’কে কদমবুসি ‘ঈদি’ নিয়ে খিলখিল করতে করতে অন্দর মহলের দিকে মিলিয়ে যাচ্ছে- আমাকে ও হতাশ করেনি মেহমুদের বাবা!,আমারও পাজ্ঞাবী’র পকেটে দু’খানা কড়কড়ে পঞ্চাশের নোট জানান দিচ্ছে মেহমুদের বাবা’র ভালবাসা!
আমি আর আর মেহমুদ বসার ঘরে এসে যখন বসলাম তখন সারা বাড়িতে মাংশ রান্নার সুঘ্রানে মাতোয়ারা
এযেনো ঘ্রাণেই অর্ধভোজন,হবেই বা না কেন? বন্ধু মেহমুদে’র মা’ যে মুর্শিদাবাদের বনেদী বাড়ির মেয়ে –
রান্নায় তাই নবাবী এতিহ্য বরাবরই উপস্থিত।
বসার ঘরে একটা সেন্টার টেবিলে’র উপর পিতলের খোরমাদানীতে খোরমা রাখা আর পাশেই আতর দানে হরেক রকমের আতর দিল্লি থেকে আনা –আমি একটা খোরমা মুখে দিতেই বন্ধু আমার আতর দান টা আমার দিতে এগিয়ে ধরলো
ওহ! কোনটা ছেড়ে কোন আতর দিবো - আসিম, আতিফা, বাখুরখজ, জিজিয়ান, জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাতুল নাঈম, মোখাল্লাত মালকি, খালতাত আল মুলুক, খালতাত আল জাওয়াহের আরো হরেক রকমের আতর সাজানো আতরদানিতে।
জানিস এই যে দেখছিস সেন্টার টেবিলের টপটা এটা হচ্ছে ‘মোরাবাদের’ কাজ করা পিতলের তৈরী আমি চোখ তুলে তাকতেই মেহমুদ একটা খোরমা মুখে দিয়ে চোখবুজে কথা গুলো বলছিলো।
আমি যখন আতরের গন্ধে মাতোয়ারা তখনই আমাদের খাবার টেবিলে ডাক পড়লো দুই ইয়ারের-
“বকরি ঈদ” বলে কথা!!
টেবিলে আইটেম দেখেই আমার পেট ভরে গেলো আহা!
কত রং বে রংএর বাশন-কোসনে আর কি তার পরিবেশনা?
এ ধরনের বাশন-কোশন আমি শুধু সে সময় মেহমুদের বাসাতেই দেখতাম।
বাসমতী চালের জাফরানি পোলাও, আফগানি মাটন পোলাও, সাদা পোলাও
গরুর মাংসের শাহি রেজালা, কড়াই গোস্ত, ঝুরা মাংস, মাংসের পিঠালি, ভুনা মাংস, সাথে আছে বড় এক টুকরা কাটা মসলার মাংস, আরো আছে গরুর মাংসের টিকিয়া, ছেঁচা মাংস, গরুর ঝাল কালিয়া
মাংশের কোপ্তাই তিন রকমের। কাঁচা গোশতের কোপ্তা, সিদ্ধ গোশতের কোপ্তা, কাঁচা-সিদ্ধ গোশতের মিশ্রিত কোপ্তা।
খাশির লেগ রোষ্ট, খাশির মাংসের গ্লাসি, কাটা মসলায় খাসির মাংস, খাসির ঝাল-মাংস, খাসির কোরমা, খাসির কলিজা ভুনা, মাটন রেজালা,খাশির মগজ ভূনা
কাবাবের বেশ ক’পদ -গরুর হাঁড়ি কাবাব, গরুর চাপ কাবাব, বিফ বটি কাবাব, গরুর মাংসের শিক কাবাব, গরুর মাংসের কাঠি কাবাব,জালি কাবাব, শামি কাবাব, ক্ষিরি কাবাব ও আছে সুন্দর করে সাজানো একটা প্লেটে!
সাথে হজমের জন্য আছে নদীর ওপার থেকে আসা কারিগরের তৈরী বিশেষ ফরমূলায় কেশর জাফরাণী বোরহাণী
যার স্বাদ ভাষায় প্রকাশ করা আমি নাদানের পক্ষে সম্ভব নয় কোনভাবেই
মিষ্টান্ন বা কম কিসে? আছে পাশের টেবিলে রাখা সাত পদ।
জর্দা সেমাই, ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা, মাওয়া’র জর্দা ,মালাই ফিন্নি-পায়েস ও ছানার পায়েস আলাদা কারুকাজ করা ভিন্ন ভিন্ন গোলাকার বাটিতে,পাশে রাখা আছে ঘরে তৈরী শাহী টুকরা ও রসবালি, বাদ যায়নি ঘরে পাতা মিষ্টি দধি ও
আহা! দেখলেই পরাণ জুড়ায়!
মেহমুদ কে প্রশ্ন “এত খাবার” করতেই বললো আরে মানুষ তো এখন আসেনি রে , সবার আসা শুরু হবে এই একটু পর হতেই এবং যেই আজ আমাদের বাসায় আসবে সবার খেয়ে যেতেই হবে এটাই নিয়ম আমাদের বাড়ীর।
কি যানি বাপু খানদানী বাড়ীর খানদানি নিয়ম-কানুন।
এরই ফাকে জানলাম শরীফা বেগমদের বাড়ী থেকে গরুর দুই খানা পেছনে’র রান আর একখানা সামনের রান সাথে আস্তো একটা জবাই করা ছাগল ও এসেছে বিলি বন্টন হিসেবে, শুনে তো চোখ ছানাবড়া, বলে কি?
মেহমুদ আমার মনোভাব বুঝতে পেরে বললো আমাদের বাসা থেকে দোস্তো আব্বা এ ভাবেই পাঠিয়েছে বিলি-বন্টন আমাদের এটাই রীতি
মনে মনে বললাম হুম তোমাদের রীতি আমার মনে ধরায় ভীতি!
দুই ইয়ার খাওয়া-দাওয়া করে মেহমুদের দোতালার দক্ষিণের রুমে বসে শাহী মিষ্টি পান চিবুতে চিবুতে আর ক্যাপষ্টানে’র সুখ টানে দিতে দিতে খোশ গল্পে মেতে রইলাম বিকেল অব্দি
বিকেলে চকের মেলায় শরীফা বেগমের সাথে ব্যাপক মজা করে দুই বন্ধু যখন বাড়ীর পথ রলাম তখন আকাশে চাঁদ শুক্লপক্ষের হেলে পড়েছে-
বাড়ী ফিরতে ফিরতে মনে এলো সূর নিজের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠলাম-
“হাওয়া মে উড়তা যায়ে,,মোরা লাল দুপট্টা মলমল কা, ইধার উধার লেহেরায়ে
মোরা লাল দুপট্টা মলমল কা, মোরা লাল দুপট্টা মলমল কা-হো জী, হো জী
ঈদ দিন-১০/০৭/২০২২
#galibsjournal

ঈদের দিনে’র গল্প
হারিয়ে যাওয়া এক ঈদে জানে জিগার মেহমুদের সাথে ঈদের নামাজ পরেই চললাম মেহমুদদের পদ্মনীধি লেনের বাসায়।
খানদানি মানুষ মেহমুদ বাসায় রীতিমত উৎসব কি খানা-পিনায় কি আপ্যায়নে -বৈঠক খানায় বসতেই এলো তিন রকমের শরবত
বাদাম কেশরের শরবত, মাঠা ও রুহ আফজার শরবত সাথে আছে ঘরে পাতা দধির লাচ্ছির শরবত।
আর আছে ঈদের অতি আবশ্যক কিছু মিষ্টান্ন, তিন রকম সেমাই,
জর্দা সেমাই, লাচ্ছা সেমাই ,হাতে কাটা সেমাই
কিছু মুখে দিয়ে একটু বসতেই দুই ইয়ারের ডাক পরলো খাবারের
সে এক বিশাল আয়োজন আমার চৌদ্দ গোষ্ঠি ও দেখে নাই এত আয়োজন এক সাথে
মেহমুদের দিকে অসহায়ের দৃষ্টি তে তাকাতেই বললো -
এ আর এমন কি রে ব্যাটা?
এখন তো আয়োজন তেমন করতে পারিনে টাকা পয়সার টানাটানি তে-
বলে কি ব্যাটা, ঘোর লাগা চোখে দেখতে থাকি একে একে
সাদা পোলাও , এক পাশে তেহারী আর ওপর পাশে সগৌরবে খাসির কাচ্চির ডিস
সাথে সালুনের বড় বাটিতে খাসির রেজালা’ র টুকরো গুলো লকলক করছে
পাশেই পরে আছে মোরগ-মসল্লাম তার সাথে বড় বড় আকারের কোপ্তা’র বাটি
টেবিলের অপর প্রান্তে ক্ষিরি কাবাব, কাটা মসলার মাংস আর বড় মাংস
ঝকঝকে কারুকাজ কাজ প্লেটের পাশে একগ্লাশ করে জাফরানী রোরহানী
রোরহানী’র দিকে নজর পরতেই মেহমুদ বললো জানিস এই জাফরানী বোরহানী-তুই কোথাও পাবি না , নদীর ওপার থেকে এক লোক এসে বানিয়ে দিয়ে যায় আমাদের যে কোন অনুষ্ঠানে তুই এক চুমুক দিলেই এর প্রেমে পরে যাবি- আসলেই তাই খাবারের সাথে যখন এক চুমুক
রোরহানী ঠোটে ছোয়ালাম সত্যিই এই স্বাদের বোরহানী আমি আগে কখনো খাইনি পরে ও না আর?
কোন রকম কিছু কিছু খেয়ে জান টা নিয়ে উঠতে যাবো এমন সময় মেহমুদ বললো কিছূই তো খেলি না
চিৎকার দিয়ে বললো আরে উঠিস না উঠিস না ,
মিষ্টি কিছু না খেলে খাবার পর, খাবার ভালো হজম হবে না রে,
খানসমাকে ইশারা দিতেই হরেক রকম মিষ্টান্ন এসে হাজির
কত তার নাম কত কারুকাজ করা বাসনে তার পরিবেশনা,
শাহী মিঠার ঠুকরা, মাওয়ার জর্দা, ঘন দুধের স্বর পরা ফিন্নি-পায়েস এক বড় গোল বাটিতে
কিছু মুখে না দিলে মেহমুদ কষ্ট পাবে তাই কোন রকম একটু মুখে ছুয়ে হাত ধুয়ে এসে বসলাম-
মেহমুদের দক্ষিণের ঘরে দুই বন্ধু মিষ্টি পান মুখে দিয়ে, ক্যাপষ্টানে একটা সুখ টান দিতেই মেহমুদ বললো জানিস আজ বিকেলে চকের মেলায় শরিফা বেগম আসবে ,
দুধে আলতা গায়ের রং এর শরীফা বেগম মেহমুদে’র প্রেয়সী আমি কিঞ্চিত উৎসাহ হইয়া বলিলাম
চল তবে আর দেরী কেন মেলায় গিয়েই বাকি গপসপ করি।
শেষাংশ
বহুবছর বাদ আজ কি মনে হলো ঈদের নামাজ পরে ফেরার সময় শরীফা বেগমের ছেলের হাত ধরে
এসে দাড়ালাম মেহমুদদের খানদানি বাসার সামনে, কিছু আজ আর মেলে না, বিশাল এক এপ্যাটমেন্টের সামনে দাড়িয়ে এক অস্হতি বোধ করলাম
কিছুই আজ আর অবশিষ্ট নেই, শুধু স্মৃতির বিড়াল গুলো ঘুরে বেড়ায় এ মাথা থেকে অন্য মাথায়।।
ঈদ দিন ০৩/০৫/২০২২
#galibsjournal

একটি অসম্পূর্ণ কবিতা
একটি জলগোলাপের জন্য মা’য়ের কাছে অনেক কেঁদেছিলাম
মা’ হেসে বললো কাঁদিস না বোকা এনে দেবো তোকে?
একদিন দেখি মা’ নিজেই জলগোলাপ হয়ে গেছে?
সে বার বৈশাখে বাবার কাছে অনেক বায়না ধরলাম
আমাকে একটা জলগোলাপ এনে দিতেই হবে?
বাবা বললেন ঠিক আছে রে – মেলা থেকে আসার সময়
তোর জন্য এবার একটা জলগোলাপ নিয়ে আসবো?
সেই যে বাবা গেলো জলগোলাপ আনতে আর ফিরে এলো না!
কতদিন তারামাখা আকাশের দিকে মুখ করে বলেছি
আমার জলগোলাপ লাগবে না-বাবা তুমি ফিরে আসো?
প্রিয় রতন স্যার’কে বললাম স্যার একটা জলগোলাপ দেবেন আমায়?
কি যে বলিস? এ আর এমন কি? নিয়ে যাস কাল?
সে কাল পরশু করে কাল মহাকালে ঠেকেছে!
রতন স্যারের চিতার সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন বলেছিলাম স্যার আমার জলগোলাপ লাগবে না-
আপনি শুধু চিতা থেকে উঠে বসুন?
না আমার আবেদন কোন কাজে লাগেনি সেবার ও, আমার চোখের জল, চিতার আগুন নেভাতে পারেনি?
বড় হয়ে একদিন প্রেমিকাকে বললাম আমায় একটা
জলগোলাপ দেবে উপহার?
হেসে বললো এ আর এমন কি ? কালই নিয়ে আসবো?
তুমি দক্ষিণের বেঞ্চ টায় বসে অপেক্ষা করো,
-কখন আসবে সময়টা বলে যাও?
-প্রখর রৌদ্রে যখন তোমার নেশা লাগে-আমি তখন আসবো?
কতবার, কতবার বৈশাখ-চৈএের রোদে নেশা লাগলো!
আমি অপেক্ষায় ছিলাম দিবানিশি
যদি তুমি আসো, হাতে নিয়ে জলগোলাপ
না তুমিও আর আসো নি?
জলগোলাপ তুলে দিয়েছিলে অন্য কারো হাতে!
আমার অপেক্ষার পালা মিছে গেলো।
জানে জিগার মাহমুদ কে বলেছিলাম দোস্ত একটা জলগোলাপ দিবি আমায় এনে?
কতজন কে বলেছি জানিস, কেউ এনে দেয় নি, তুই দিবি তো?
মাহমুদ অট্রহাসি দিয়ে বললো কি বলিস বেটা?
একটা মাএ জলগোলাপ? আমি তোকে দশটা জলগোলাপ এনে দেবো কাল?
আশায় ছিলাম মাহমুদ আমায় ফাঁকি দেবো না?
সকাল- দুপুর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা মাহমুদের কাছ থেকে জলগোলাপ নেওয়ার অপেক্ষায় আমি?
খবর পেয়ে দৌড়ে গেলাম মর্গের সামনে, ডোম তখন নিপুন হাতে মাহমুদের স্বপ্ন গুলোর গায়ে আঁকিবুঁকি আঁকছে?
না এরপর আর আমি কখনো জলগোলাপ চাইনি, চাইবো না কখনো।
১৬/০৩/২০২২
#galibsjournal