মৃত ব্যক্তিকে ক্রায়োজেনিকভাবে হিমায়িত করে রাখা হচ্ছে কেন? খরচ মাএ $200000!
পৃথিবীর সব মানুষই চায় তার প্রিয় জন সবসময় জীবিত থাকুক তার সাথেই থাকুক , বাবা-মা, সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, প্রিয় বন্ধু-বান্ধব আমরা সবাই চাই এরা সবাই জীবিত থাকুক, কিন্ত প্রকৃতির নিয়মে মানুষের শরীরে এক সময় রোগ বাসে বাঁধে শরীর জরাজীর্ণ হয় শরীরের সমস্ত অর্গান পার্টস গুলো কার্য ক্ষমতা হারিয়ে মানুষ মৃত্য মুখে পতিত হয়। এটাই স্বাভাবিক এটাই প্রকৃতি ও সৃষ্টিকতার বিধান বলে আমরা মেনে নেই।
কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ এক না ,না এক ধর্মের না, না একই মন-মানসিকতার, পৃথিবীর কিছু মানুষের ধারণা তার পরিবার পরিজনের মৃত্যর পর, বিশ্বাস করা হয় ভবিষ্যতে এসব দেহকে বিজ্ঞানের সাহায্যে আবার জীবিত করা সম্ভব হবে। সারা বিশ্বে অনেক মরদেহ ক্রায়োজেনিকভাবে হিমায়িত করে রাখা হয়েছে।
মৃত দেহ ক্রায়োপ্রিজারভেশন শুরুর ধারণা কি ভাবে এলো:
১৯৬৪ সালে প্রকাশিত আমেরিকান লেখক Robert Ettinger এর বই "The Prospect of Immortality” পড়ে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হন নাশার বিজ্ঞানী Fred Chamberlain ও তার স্ত্রী Linda Chamberlian.
এই Robert Ettinger কেই "father of cryonics,"বলা হয়ে থাকে।
এই Chamberlain দম্পতিই আমেরিকার ১৯৭২ সালে Arizona তে প্রতিষ্ঠা করেন non-profit organization “Alcor Life Extension Foundation”
নীচের এই চিএটির মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কত গুলো নতুন মেম্বার যোগ হয়েছে , নতুন নতুন দেশের সংখ্যা, এবং পৃথিবীর কোন কোন দেশের মেম্বারদের মৃতদেহ ইতিমধ্যে ক্রায়োজেনিকভাবে হিমায়িত করে রাখা হয়েছে।
ক্রায়োপ্রিজারভেশন বলতে কি বুঝায়?
ক্রায়োপ্রিজারভেশন হচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি যা দিয়ে মরদেহ হিমায়িত করে রাখা হয়। এবং বিশ্বাস করা হয় ভবিষ্যৎ এ বিজ্ঞান মৃতদেহ গুলো কে আবার জীবিত করবে।
মৃত দেহ ক্রায়োপ্রিজারভেশন করে কারা রাখে?
যারা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতে এসব দেহকে আবার জীবিত করা সম্ভব হবে।
কিন্তু এর গবেষকরা বলেছেন এটা শুধুই একটি চিন্তাধারা এবং আশা কিন্ত এটা কিন্তু কোন বিজ্ঞান নয়।
কি প্রক্রিয়ায় মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়:
মৃত্যুর সনদ পাওয়ার পর পর যে বা যারা এই ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্বতিতে মৃত দেহ সংরক্ষন করতে চান তাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত দেহ কে নিয়ে যেতে হয়। Death certificate পাবার পর পরই মৃত দেহের মস্তিষ্ক থেকে সমস্ত রক্ত বের করে ফেলা হয়।
একটা ক্রায়োপ্রিজারভেশন তরল যেটা খুব কম তাপমাএায়ও জমে যায় না, সেটা মৃত দেহের ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, এর পর মরদেহ টি প্রতিটি ট্যাংকে ক্রোমোপ্রিজাভেশন স্টোরেজ সেটে-লিকুইড নাইট্রোজেন থাকে এবং এটা কে (-৩২০ ) ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাএায় রেখে দেওয়া হয় , এভাবে কোন ক্রোয়েনিক কেন্দ্রে রাখা হবে আগামী ১০০ বছর, বিজ্ঞানী’রা আশা করছেন আগামী দশ বছরের মধ্যে একটা রেজাল্ট পাওয়ার, কেননা তারা নিজেরাই এখন শিওর না তাত্বিকভাবে এই পদ্বতিতে মৃতদেহ কে আদৌ বরফমুক্ত করা সম্ভব কিনা, এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একটি মৃত হিমায়িত দেহের বাহিরের এবং ভেতরের তাপমাএা একইমাএায় ফিরিয়ে আনার কোন পদ্ধতি এখন ও আবিষ্কার হয়নি।কেবল মাএ এই সমস্যার সমাধান করা গেলে দেহকে বরফমুক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
Non-profit organization Alcor Life Extension Foundation নিয়ে কিছু তথ্য যেনে আসি চলুন:
এখন পর্যন্ত Alcor Life Extension Foundation এ যত মেম্বার হয়েছেন তাদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য তার মধ্যে ৭৫% পুরুষ এবং ২৫% মহিলা।
একজন মেম্বার রিসার্সের জন্য দিয়েছেন পাঁচ মিলিয়ন ডলার (নিয়মিত অনেকেই ডোনেশন দিয়ে থাকেন, চাইলে আপনি ও দিতে পারেন) রিসার্সের জন্য। চাইলে আপনার দেহ টি মৃত্যুর পর সংরক্ষণ ও করতে পারেন। আপনি যে দেশেই থাকুন না কেন এবং যেখানেই মারা যান না কেন , আপনি যদি Alcor মেম্বার হন তাহলে তারাই আপনার মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্বতিতে ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্বতিতে মৃত দেহ সংরক্ষন করবেন।
এখন আপনার কৌতুহল হচ্ছে কত খরচ হতে পারে ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্বতিতে মৃত দেহ সংরক্ষনে, আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি পুরো প্রসেসের খরচ মার্কিন ডলারে $200000, শুধু মাথা সংরক্ষণ খরচ হবে $80000, আর খরচ টি হয় সম্পুণ জমা কৃত টাকাটির অর্ধেক খরচ প্রিজারভেশনের জন্য এবং বাকী অর্ধেক খরচ করা হয় লং ট্রাম স্টোরেজের জন্য।
এখন সভাবতই আপনার মনের প্রশ্ন আসতে পারে পৃথিবীতে কার শরীর সবপ্রথম হিমায়িত করা হয়-
প্রথম যার শরীর হিমায়িত করা হয় তিনি হলেন আমেরিকান সাইকোলজিষ্ট ডা: জেমস বেডফোর্ড (James Bedford) সময়কাল: ১২ জানুয়ারী, ১৯৬৭।
আরেকটি অবাক তথ্য হলো Alcor Life Extension Foundation এ সবচেয়ে বয়স্ক হিমায়িত শরীর –একজন মহিলা’র - বয়স ১০১ বছর এবং সবচেয়ে কমবয়সী হিমায়িত শরীর একজন বাচ্চা’র বয়স ২ বছর।
এবং এক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে গড়ে প্রতি ৪টি Alcor Life Extension Foundation এর কাষ্টমারের মধ্যে ১ জন Sun Francisco Bay এরিয়ার।
আরেকটি মজার তথ্য আছে তা হলো কিছু পশু এই পক্রিয়ার মাধ্যমে হিমায়িত করে রাখা হয়েছে Alcor Foundation এ এবং তার সংখ্যা নেহাত কম নয় ,প্রায় ৯০ টি।
পশুদের মধ্যে আছে কুকুর,বিড়াল, কচ্ছপ এবং চিনচিলা- যারা জানেন না চিনচিলা দেখতে কেমন তারা এই লিংকে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ।
মানুষের আগ্রহ প্রতি নিয়ত বেড়েই চলেছে ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্বতিতে মৃত দেহ সংরক্ষন প্রতি এবং তা বছরে গড়ে ৮% করে বাড়ছে।
সবশেষে
পুরা প্রক্রিয়া টি নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে, আছে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত । একজন মানুষ যদি ১০০ বছর হিমায়িত থেকে হঠাৎ করে ফিরে আসে তাহলে তার কেমন অবস্থা হবে পরিচিত কোন মানুষই তার বেঁচে থাকবে না- তাই বিজ্ঞানী’রা নিজেরাই বলেছেন এটা একটা আশাবাদ কোন বিজ্ঞান নয়।
সম্প্রতি বিবিসি এ সম্পর্কে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যিনি দঃকোরিয়ার প্রথম ব্যক্তি এবং যিনি তার মা’কে ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হিমায়িত করে রেখেছেন রাশয়ার কোন এক ক্রায়োপ্রিজারভেশন সেন্টারে, উল্লেখ্য রাশিয়াতে কিছু ক্রায়োপ্রিজারভেশন সেন্টার রয়েছে।
তথ্য সহায়তাঃ
https://www.cnet.com/