সবাই তো সুখি হতে চায় – আপনার কাছে সুখ মানে কি?
সুখ!! দুই অক্ষরের ছোট্ট একটা শব্দ । শব্দ টা দু’ অক্ষরের হলেও এ নিজে কিন্তু একেবারে ছোট্ট কিছু না। এটা এমন এক অদৃশ্য বৃহৎ মানবিক অনুভূতি , যা আপনি অনুভব করতে পারবেন আপনার চিরন্তন সমৃদ্ধি, সার্বক্ষণিক উন্নতি এবং আপনার শারীরিক, মানসিক সুস্থতা অর্জন অথবা আপনার মানসিক পরিতৃপ্তির মাধ্যমে।
তবে কি সুখ কেবল গুটি কয়েক বৈশিষ্ট্যকেন্দ্রিক? না, তা কিন্তু নয়। সুখ একেকজনের কাছে একেকরকম। কেউ হয়তো শুধুমাত্র ভালো খেয়ে অথবা ভালো পরেই সুখী হয়। অপরদিকে কেউ হয়তো একটুখানি ভালোবাসার অভাবে সারাজীবন নিজেকে প্রচন্ডরকম দুঃখী মানুষ ভেবে যায়।
সন্দেহ নেই সুখ এক আপেক্ষিক অনুভূতি। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এ এক ভিন্নরকম রিয়ালাইজেশন।
আমার কাছে সুখ আসলে কি?
আমার কাছে সুখ এক বাতাস ভর্তি বেলুনের মতন। আপনি যত বেশী বাতাস ভরাবেন তত বেশী বেলুনটা বড় হতে থাকবে। একটা নির্দিষ্ট অবস্থায় যাওয়ার পরে আপনার উচিৎ হবে এই বেলুনে আর বাতাস না দেওয়া। তারপরও যদি দিতে চান, আল্টিমেটলি বেলুন টা ফেটে গিয়ে আপনার সব ইচ্ছাদের মাটি করে দিবে!!
আমি কি কঠিন কিছু বলে ফেললাম? বেলুনটাকে যদি আপনার সুখ ভাবেন আর বাইর থেকে প্রদত্ত বাতাস টাকে যদি ভাবেন চাহিদা তাহলেই কিন্তু সুখের এক্সপ্লানেশন একদম ক্লীয়ার। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আপনার চাহিদা যতই বাড়তে থাকবে, আপনার সুখগুলোও সব ফাটা বেলুনের বাতাসের মতো চারপাশে বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে। এবার আপনি ভাবুন, এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুখ আপনি কীভাবে আপনার নাগালে আনবেন!
জানেন, অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে আমি সুখী কিনা। জীবনে প্রথম যে এই প্রশ্নটা করেছিলো আমাকে, আমি তাকে উত্তর দিয়েছিলাম-আমার কাছে সুখ মানে তুমি থাকা!
বলা বাহুল্য সে আজ আর কোথাও নেই। প্রথম যে দিন থেকে সে নাই হওয়া শুরু করলো, আমার নিজেকে প্রচন্ডরকম দুঃখী এবং অসহায় একজন মানুষ মনে হতো। প্রিয় কোন মুভি, প্রিয় বই অথবা প্রিয় মানুষগুলো সব আমার চোখের সামনে এক এক করে ঝাপসা হতে লাগলো।
আমি হতে লাগলাম বোধহীন,আবেগহীন অন্য এক অসুখী মানুষ।
এরপর লম্বা সময় গড়ালো। বালুর নদীর পানি তে আমার লিটারে লিটারে চোখের পানিতে হলো একাকার। তারপর একদিন আমি আবার সুখ খুঁজে পেলাম।
হ্যাঁ খুব অদ্ভুত ভাবে আমি সেই সুখ একদিন খুঁজে পেয়েছিলাম। একদিন নদীর তীরে বসেছিলাম। আশেপাশে খেয়াল করতেই চোখে পরলো একটা ছোট চড়ুই পাখি নদীর তীরে খড় কুটো খেতে এসে মাছ ধরার জালে আটকে গেছে। ছোট্ট পাখিটার শরীরে এতো ক্ষত হয়েছিলো আর রক্ত বের হচ্ছিলো, কি যে কষ্ট লাগছিলো আমার। বারবার ভাবছিলাম কি করে একে মুক্ত করে কিছুটা শান্তি দিতে পারি! আমার অপটু হাতে যখন আমি জালের সুতা গুলো কাটছিলাম, দুঃসাধ্য লাগছিলো, আর অসহায়বোধ কাজ করছিলো অনেক। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরে সত্যিই যখন কাজটা করতে পেরেছিলাম, পেছনের সব কষ্ট ভুলে যেয়ে অন্যরকম এক শান্তি কাজ করছিলো আমার মনে।
সেদিন বুঝেছিলাম আসলে সুখ কি। সুখ কেবলি নিজের ভেতরে বুঁদ হয়ে থাকা না। বরংচ অন্য কারো দুঃখ, কষ্ট লাঘব করতে পারার মতোন সুখের অনুভূতি দ্বিতীয়টা আর নেই কোথাও।
ইচ্ছে করলেই কি সুখী হওয়া যায়?
যুগ যুগ ধরে যে প্রশ্ন দুনিয়ার সকল মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে গুনপোকার ন্যায় কুটকুট করে চলেছে,ইচ্ছে করলেই কি সুখী হওয়া যায়? এ প্রসঙ্গে আমার খুব পছন্দের একটা উক্তি আছে।
আব্রাহাম লিংকন
“মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, ঠিক ততটাই সে হতে পারে। সুখের কোন পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিলাষী করে তুলতে পারি”
আপনি ইচ্ছে করলেই সুখী হতে পারেন। সুখ জিনিসটা হলো আপনার বেড রুম অথবা ড্রয়িং রুমের মত। একেবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস দিয়ে একে আপনি যেভাবে চান সেভাবেই সাজাতে পারেন বা গড়ে তুলতে পারেন।
আপনার কাছে এক হাজার টাকা আছে, আপনি চাইলে এই টাকাটা রাস্তায় পরে থাকা অসহায় কোন ব্যাক্তির জন্য খাবার কিনে আপনার সুখ ক্রয় করতে পারেন। আবার চাইলে আপনার বুকপকেটে রেখে দিয়ে, একটা এক হাজার টাকার গর্বিত মালিক হিসেবে নিজেকে সুখী বানাতে পারেন।
আমার এক বন্ধু আছে, তার কাছে সুখ হলো পাহাড়ের চুড়ায় অথবা সমুদ্রের তীরে দাড়িয়ে সুর্যাস্ত অথবা সুর্যোদয় উপভোগ করা।
আরেক বন্ধু আছে বর্ষায় সমুদ্রের উপর বৃষ্টি পড়া দেখতে প্রতি বছর কক্সবাজার চলে যায়- ভরা বর্ষায় আপনি যাবেন? বলবেন পাগল কোথাকার!
তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি পাও এভাবে ঘুরেফিরে?
সে উত্তর করেছিলো, জীবনে বেঁচে থাকার সুখ প্রেরণা পাই ,আবার নতুন করে বাঁচার শক্তি পাই।
কত অদ্ভুত মানুষের সুখ ভাবনা! পৃথিবীর সকল মানুষের সুখভাবনা এনালাইসিস করতে গেলে বোধ করি দু তিন হাজার এনসাইক্লোপিডিয়া লিখে ফেলা যাবে।
সুখী হতে চান? আপনার যা করা উচিৎঃ
সুখ নামক সোনার হরিণটাকে ধরতে চান? দেখুন আমার আউডিয়া গুলো। আইডিয়াগুলো একান্তই আমার নিজের এনালাইসিস। গতানুগতিক মনে করে এড়িয়ে যেতে চাইলে, এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে দু একটা বাই চান্স যদি ফলো করতে পারেন, খারাপ হবে না আপনার।
ধর্মীয় চর্চা তে সুখী হওয়া যায়?
ধর্মীয় চর্চায় মানুষ সুখী হয় কিনা এটাও একটা কন্ট্রোভারসিয়াল মেটার। কেউ কেউ মনে করেন ধার্মিক ব্যাক্তিগণ অনেক নেক সুখী হয়ে থাকেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও এর সমর্থনে অনেক ভ্যালিড পোস্ট পাওয়া যায়। যাই হোক, ধর্মীয় চর্চায় মানুষের সহনশীলতা , সহমর্মিতা, ধৈর্য্য ইত্যাদি গুণ অনেক বেড়ে যায়। ফলে মানুষের এক্সপেকটেশন কমে যায় এবং সে অল্প কিছুতেই তখন অনেক বেশী সুখী বা স্যাটিসফাইড থাকে।
পরিশেষে,
সুখ, সৌভাগ্য অথবা সুযোগ এসব আপেক্ষিক জিনিস কখন যায় কখন আসে তা অনিশ্চিত। আপনি চাইলেই এসব জিনিস বস্তুত: আপনার মুষ্টি বদ্ধ করে রাখতে পারবেন না। আপনি যা পারেন তা হলো, আপনি যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থাতেই নিজের সুখ আর শান্তিটুকু খুঁজে নিতে পারেন।
প্রকৃত সুখী মানুষ হওয়া ততটা কঠিন না যতটা হয়তো আপনি ভাবছেন।আপনার ছোটবেলার কথা আপনি একবার ভেবে দেখুন। কত্ত সুখী ছিলেন আপনি তখন! প্রতিটি মানুষ তার ছোটবেলায় সুখী থাকে। কেন জানেন? কারন তখন তার চাহিদা কম থাকে। বড় হওয়ার সাথে সাথে চাহিদাগুলো ও যখন পারিপার্শ্বিক হারে বাড়তে থাকে, তখনই শুরু হয় অসুখী হওয়ার জ্বালা।
আর এজন্যই, চাহিদা কমান, চাহিদা কমান এবং চাহিদা কমান।