• Home
  • Blog
  • Blog

পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো

''পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো''- কেবল একটি লাইন নয় বরং এ এক অভিন্ন মানবিক উপলব্ধি, যা বস্তুত ফুটিয়ে তুলেছে মানুষের মান-অভিমানে মোড়ানো জীবনের অন্ত নামক অমোঘ এক সত্য।

মৃত্যু সেই অমোঘ সত্য যাকে আমরা অস্বীকার তো কোনভাবেই করতে পারিনা, তবু কেন যেন এড়িয়ে যেতে চাই।

আমাদের এই চলমান জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে , আমরা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়বো ,জীবনের সব চাওয়া পাওয়া থমকে যাবে,আমরা সবাই জানি এই নির্মম  সত্যটাকে, কিন্তু মেনে নিতে পারি ক’জন, ক’জন বিশ্বাস করি জীবনের সব হিসেব নিকেশ একদিন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যাবে। ব্যাপার টা এমন, জানি কিন্তু মানি না অথবা জেনেও এড়িয়ে যাই।

মৃত্য নিয়ে সবার ভাবনাঃ

মৃত্যু নিয়ে সবার ই কিছু না কিছু ভাবনা রয়েছে। এই যেমন, সেদিন হুমায়ুন ফরিদীর এক পুরানো রেকর্ড  দেখছিলাম। উপস্থাপিকা উনাকে মৃত্যু নিয়ে উনার ধারণা  জিজ্ঞেস করতেই উনি এই অমোঘ সত্যটাকে প্রচন্ড সুন্দর ভাবে বর্ণনা  করেছিলেন।

মৃত্যু নিয়ে বলার সময় ফরীদি বলেন, মৃত্যু একটি ভয়ংকর সুন্দর জিনিস কারণ মনে মৃত্যুভয় থাকলে, কেউ কখনও পাপের চিন্তা করতে পারে না এখানেই মৃত্যুর সৌন্দর্য

যাই হোক, মৃত্যু নিয়ে এই শক্তিশালী অভিনেতার এমন সুন্দর ধারণা থাকার পরেও তার কিন্তু একটা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। সম্পুর্ণ একাকী একটা বাসায়, কেবল বাথরুমে পা পিছলে পরে যেয়েই মৃত্য হয় ৬০ বছর বয়সী এই অভিনেতার।

অপরদিকে নির্মল সেন বলেছেন,''স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই''

পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো

পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো

আসলে কি আপনি চাইলেই স্বাভাবিক মৃত্যুর আশা করতে পারেন? পারেন না। এ এক অনিশ্চিতযাএা- কিন্তু অবশ্যম্ভাবী।

এই তো সেদিন ,বাসার পাশেই পরিচিত লোকটা হেঁসে হেঁসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলো। মাই ডিয়ার টাইপের লোকটা একদিন পরেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলো।

এমন তরতাজা মানুষ টা এভাবে হুট করে নাই হয়ে গেলো, বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমার।

কিন্তু আমার বিশ্বাস করা না করায় কি এসে যায়! যার যাবার সে ঠিকই চলে গেছে।  

মৃত্যুকে আমরা মানতে চাইনা। আমরা মনে করি এতো বড্ড দুরের জিনিস। হ্যাঁ এটা ঠিক, আরেকজনের মৃত্যুতে আমরা ঠিকই কষ্ট পাই, হা হুতাশ করি। কিন্তু আমরাও যে এভাবে হুট করে মারা যেতে পারি এটা কেউ ভাবি না। অথচ মৃত্যু প্রতিটা জীবিত প্রাণীর সাথে সাথে ছায়া হয়ে ঘুরছে প্রতিক্ষণ। সৃষ্টিকর্তা নির্ধারিত হায়াত টা যখন শেষ হয়ে যাবে, আজরাইল(আঃ)এসে চোখের পলকে আমাদের জান কবজ করে নিবে।

অন্য সব মানুষের মতন আমারো প্রায়শই মনে হয়, হ্যাঁ মৃত্যুর সময় এতো তাড়াতাড়ি কি আর আসবে আমার!(?) বয়সতো এখনো কত্ত বাকী। বাবা মা,  নানী দাদী সবাই তো আলহামদুলিল্লাহ এখনো দিব্যি সুস্থ। তো এর মাঝে আমার আবার মৃত্যু চিন্তা করার কি দরকার!!

কিন্তু পরক্ষণেই যখন কিছুটা গভীরভাবে চিন্তা করি, মনে হয় আহারে, আমি কেন মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে চাই। কেন আমি একে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা  দেখাই। এক সেকেন্ডের ব্যবধানে আমি এই দুনিয়া ত্যাগ করতে পারি।

আমার এমন ভাবনা বুঝি শ্রীকান্ত আচার্য কেও নাড়া দিয়ে গেছিলো। আর তাইতো সে ও গেয়েছে গান-

''পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো।। মেঘলা রাতে লুকিয়ে থেকে, রুপার আলোয় জ্যোৎস্না পাবো।।''

আমার ও খুব খারাপ লাগে যখন দেখি আশেপাশের পরিচিত অথবা কাছের কেউ হুট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে। কিন্তু সত্যি বলতে যখন নিজের মৃত্যুর কথা ভাবি, আমিও একে এড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু এড়িয়ে গেলেই কি পার পেয়ে গেলাম?

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হে মানব সম্প্রদায়! সুখ-শান্তি বিনাশকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি করে স্মরণ করো (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

অথচ আমি অথবা আমরা  ভোগ বিলাসে ব্যস্ত হয়ে সময় কাটাই দুনিয়া নামক মোহ তে বুদ হয়ে।

অথচ দেখেন, আলবার্ট আইনস্টাইন ও তার জীবতদশায় অস্বীকার করেন নি মৃত্যুকে, এড়িয়েও যাননি মৃত্যুকে কোনভাবে।

আমি তখনই যাব যখন আমি চাই কৃত্রিমভাবে জীবন বাড়ানো বিস্বাদ আমি আমার অংশ ভোগ করেছি এখন যাওয়ার সময় আমাকে যেতে হবে

সূত্রঃbd-pratidin.com

মৃত্য নিয়ে ইসলাম যা বলেঃ

আমাদের ধর্মে  বারবার বলা হয়েছে মৃত্যু কে স্মরণ করতে। বারবার মৃত্যুর চিন্তাই পারে আপনাকে আখিরাতের এক সুগম পথের দিকে পরিচালিত করতে। মৃত্যু ভয়ে ভীত মুসলমান কখনো দুনিয়াবি কোন খারাপ কাজ,পাপাচার অথবা জুলুম, মিথ্যা ইত্যাদিতে লিপ্ত হতে পারে না। বরংচ আখিরাতের শাস্তির কথা বারবার মনে করে দুনিয়াবি সকল অন্যায় এবং পাপ পরিত্যাগ করার উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো নিজের মরণ কে বারবার স্মরণ করা।

''হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! সবচাইতে বুদ্ধিমান লোক কে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত থাকে'' (ইবনে মাজাহ)

''হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- সংকটময় মুহূর্তে বান্দা যখন মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন তার এ স্মরণ সংকটময়তাকে দূর করে দেয় আর সুখের কালে মৃত্যুকে স্মরণ করে তখন এ স্মরণ তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে দূরে ঠেলে দেয়''

আপনি যখন প্রতিনিয়ত ভাবতে থাকবেন এই দুনিয়া আর কতদিন! আমি তো এই দুনিয়ার স্বল্প দিনের মেহমান। আমার মাওলা যখন আমাকে ডাক দিবে, আমাকে তো চলে যেতে চিরস্থায়ী পরকালে। তখন কি আর আপনি কোন খারাপ কাজ করতে পারবেন? না পারবেন না।

এই পথ চলা একদিন থেমে যাবে

এই পথ চলা একদিন থেমে যাবে

তাই বলে কি হতাশ হবেন?

হুমায়ুন ফরিদীর কথাটা বারবার মনে পরে।মৃত্যু এক ভয়ংকর সুন্দর জিনিস। একে মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আপনার যে কোন মুহুর্তে মৃত্যু হতে পারে এটা ভেবে তাই বলে আপনি হতাশ হবেন? প্রাত্যহিকী যত কাজ কর্ম বাদ দিয়ে হতাশার গহবরে নিমজ্জিত হয়ে নিজের ইহকাল পরকাল সব শেষ করবেন?

না, তা কেন করবেন!

একজন মুমিন ব্যক্তি কখনো মৃত্যুচিন্তায় হতাশ হয়ে যায় না। বরংচ যে কোন মুহুর্তে আমার মৃত্যু হতে পারে এই ভেবে নিজেকে পরকালের জন্য উপযোগী করে তোলে।

সকল সত্তাই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী, অতঃপর আমার দিকেই তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে।’ (আলে ইমরান: ৫৭)

মৃত্য যেমন জীবনের স্পন্দন থামিয়ে দেয়, তেমনি মৃত্যচিন্তাও জীবনের সব রঙ তামাশা, খামখেয়ালী ভাবনা সব নিমিষেই শেষ করে দেয়।  আপনার তখন আর মনে হবে না, অমুক মরেছে, তমুক মরেছে যা হবার হবে যখন আজরাইল(আঃ) আসবে তখন দেখা যাবে। আবার এরকম ভাববার অবকাশ ও আপনি পাবেন না, কি লাভ এতো কিছু করে! এই পড়াশোনা,  এতো দ্বায়দ্বায়িত্ব,  কি হবে এসবে জড়িয়ে, দুদিন পরে তো আমি মরেই যাবো।

মৃত্যু আসবেই এটা যেমন আপনাকে মেনে নিতে হবে তেমনি একে এড়িয়ে না গিয়ে যথাযথভাবে নিজের দুনিয়াবি সকল দ্বায়িত্ব ও আপনাকে সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে।

যে কোন মুহুর্তে মারা যাবেন, এই হতাশায় নিজেকে না ডুবিয়ে, আল্লাহর নির্দেশ মতন চলে দুনিয়াবি দ্বায়িত্বগুলোও পালন করবেন ঠিকঠাক,আর এতেই আপনি খুঁজে পাবেন আলোর পথ।

পরিশেষে,

আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব নিঃশেষ হয়ে যাবে, টিকে থাকবে শুধু তোমার রবের মুখমণ্ডল (আর-রাহমান: ২৭)

আর তাই মৃত্যু কে মেনে নিয়ে, সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করাই বুদ্ধিমানের কাজ বলেই আমার কাছে মনে হয়।

প্রিয় পাঠক, আজ এখানেই সমাপ্তি টানছি পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন যাবো থেমে যাবো আমি , থেমে যাবে আমার লেখালখি, আপনাদের কাছে আর কোন আপডেট যাবে না, থেমে যাবে আমার এই ব্লগের স্পন্দন, সেদিন কি চোখের কোণে একটু মুক্তোর দানার একটু –একটু চিকটিক আমার জন্য বরাদ্দ হবে ।

আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্ট করতে ভুলবেন না দয়া করে।

Click Here to Leave a Comment Below 0 comments

Leave a Reply: