• Home
  • Blog
  • Blog

আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন- আবেগে গা ভাসাবেন না

আপনি মানুষ টা কেমন যেন! অল্পতে যেমন আপনি রেগে যান তেমনি অল্প তে আবার আপনার রাগ ভেঙে ও যায়। আবার হুট হাট চোখের পানিতে বুক ভাসাতে অথবা অল্প কিছুতেই খুশী হয়ে যেতে ও আপনার কোন জুড়ি নেই।

এই যে একজন মানুষ হিসেবে আপনার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেগুলো, এগুলো দিয়ে একটা জিনিস খুব স্পষ্টত প্রকাশ হয়। সেটা হলো, আপনি মানুষটা খুব আবেগী।

আপনি এতোটাই আবেগী যে, আপনার আবেগ আপনার কাবুতে থাকেনা। আবেগের বশবর্তী হয়ে আপনি এমন কিছু করে ফেলেন, পরবর্তীতে নিজেই অনুতপ্ত এবং লজ্জিত হোন। ভাবেন, আহারে কি করলাম এসব!

আবেগ কি?

এক বা দুই লাইনে আবেগ কে বর্ণনা করা আসলে খুব কঠিন কাজ। আবেগ মুলত মানসিক এবং শারীরিক মিক্সড এক অবস্থা অথবা অনুভূতি যা নিজে নিজেই তৈরী হয়।

নিজে নিজে বলতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বোঝাতে চাইছি আর কি! এখানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে দ্বিতীয় কারো আচরণ অথবা ক্রিয়াকর্ম।

এই আবেগ অনেক ক্ষেত্রেই আপনার কন্ট্রোল এর বাইরে। তার মানে কখন আপনার রাগ উঠবে, কখন আপনার ইগোতে লাগবে অথবা কখন আপনার ভালো বা খারাপ লাগবে আপনি নিজেই তা কন্ট্রোল করতে পারবেন না।

হ্যাঁ যেটা আপনি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে পারবেন তা হলো ভেতরে ভেতরে আপনার যাই হোক, মাথা ঠান্ডা রেখে  আচরণগঠিত কোন বহিঃপ্রকাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ কিন্তু এটাই।

যাই হোক,বলছিলাম আবেগ কি। এবার জানি চলুন আবেগের উপাদান গুলো কি কি।

আবেগের উপাদানঃ

পৃথিবীতে অনেক ধরনের আবেগীয় উপাদান আছে যা প্রতি মুহূর্তে আপনার আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

এই মুহূর্তে আমার যেগুলি মনে আসছে-

১.খুশী হওয়া

২. দুঃখ পাওয়া

৩.রেগে যাওয়া

৪.ভয় পাওয়া

৫. নিজেকে একা ভাবা

৬.হিংসা করা

৭.বিতৃষ্ণা বোধ হওয়া

৮. উদ্বিগ্ন হওয়া

৯.চমৎকৃত হওয়া

১০.সহজেই কাউকে বিশ্বাস করা

১১. ভালোবাসা

১২.দয়া করা

১৩.মায়া করা

১৪.হতাশ হওয়া

মানুষের আবেগ কীভাবে তৈরী হয় ?

যদিও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন থিওরি বের করেছেন আবেগের উৎপত্তি নিয়ে, সব থিওরির মোদ্দা কথা একটাই আর সেটা হলো আবেগ তৈরী হয় আমাদের মস্তিষ্কে।

যাই হোক, আবেগ প্রসঙ্গে খুব জনপ্রিয় একটা মডেল হলো, The Schacter-Singer model.

১৯৬২ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী Stanley Schacter  এবং Jerome Singer  আরো অন্যান্য বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতবাদগুলো কে এনালাইসিস করে আরো বেটার একটা এক্সপ্লানেশন দেন আবেগের কারন এর ।

তাদের মতবাদ অনুযায়ী-

“মস্তিষ্কের করটেক্স নামক অংশ যেটা সচেতন ভাবে চিন্তার কার্যক্রম গুলো নিয়ন্ত্রণ করে, মুলত সেখানেই মানুষ তার আবেগের সাথে পরিচিত হয়।”

Source: humanillnesses.com

একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যাক। যেমন ধরেন আপনি কোন একটা এক্সিডেন্ট এর খবর শুনলেন। এ ক্ষেত্রে যেটা হয়, শারীরিক রেসপন্স, যেমন আপনার হার্ট রেট বেড়ে যায়। এই শারীরিক রেসপন্স খবর পৌছে যায় আপনার মস্তিষ্কে অবস্থিত কর্টেক্স এ।

কর্টেক্স তখন এই খবর কে একটা লেভেল লাগায় দেয় যে এটা একটা ভয় এবং কষ্টের খবর। এখন কর্টেক্স কীভাবে বুঝে যে এটা ভয় অথবা কষ্টের খবর? এক্ষেত্রে সে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগায়। মানে এর আগেও আপনি এরকম কোন খবর শুনে ভয় পেয়েছিলেন, আপনার মস্তিষ্ক সেই অনুভব টাকে চিনে রেখেছে আর কি। তো কর্টেক্স যখন লেভেল লাগায় দেয় এটা ভয়ের আর কষ্টের খবর, এরপর আপনি ভয় পান,কষ্ট পান ইত্যাদি ইত্যাদি।

এভাবে যে কোন কিছু এক্সটার্নাল কোন ঘটনা বা আচরণে যখন  আপনার কোন শারীরিক রেসপন্স ঘটে, খবর চলে যায় আপনার মস্তিষ্কের করটেক্স এ। অতঃপর সেখান থেকেই  সিগনাল আসে আপনার যে কোন আবেগীয় অনুভূতির।  

আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন

নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন/ আস্হা রাখুন

যে কোন কাজে  নিজের উপর আস্হা রাখুন, বিশ্বাস রাখুন, আপনি পারবেন- এবং অবশ্যই আবেগের বশবতী হয়ে কোন কাজ করছেন না।

নিজেকে চিনুন/ নিজেকে সময় দিন

যে কোন মানুষ তার নিজেকে চেনা বা নিজেকে বোঝা খুব বেশী প্রয়োজন, নিজেকে না চিনলে বা বুঝলে আপনি যে কোন ভুল সিন্ধান্ত নিতে পারেন, তাই সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে বোঝা বা চেনা ।

দ্রুত প্রতিক্রিয়া না দেওয়া

যে কোন ঘটনায় দ্রুত নিজের কোন প্রতি ক্রিয়া দেখাবেন না, ভেবে চিন্তে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন ।

সঠিক সমাধান পৌছানো

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না শিখলে আপনি সঠিক সমাধানে কখন ও পৌছাতে পারবে না ।

'না' বলা শিখুন

এটা খুব প্রযোজন – না বলতে শেখা – আবেগ দিয়া কোন কাজ বা ঘটনা বিশ্লেষণ না করে ,চিন্তা করে দেখুন কাজ/ সময় / আপনার পক্ষে কিনা, আপনার বিপক্ষে থাকলে অবশ্যই না বলুন – না হলে ” না” বলতে না পারার জন্য আপনাকে হয়তো বাকি জীবন আফসোস করতে হতে পারে ।

নিজের জন্য অনিষ্টকারী মানুষগুলোকে জীবন থেকে চলে যেতে দিন

প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছুক্ষতিকর মানুষ আসবেই, তাদের চিনুন, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করুন তাদের কে চলে যেতে দিন আপনার জীবন থেকে ,আবেগের বশবতী হয়ে তাদের ধরে রাখতে জাবেন না ।

আবেগে গা ভাসানো মানে কি?

আমাদের দেশে তো টিন এজার ছেলে মেয়েদের একটা কথা প্রায়শই শুনতে হয়। আবেগে গা ভাসানো যাবে না। তাহলে হ্যান হবে ত্যান হবে ব্লা ব্লা ব্লা।

আসলে এই আবেগে গা ভাসানোটা কি? আর বিশেষ করে টিন এজড ছেলেমেয়েদেরকেই এই কথা টা কেন বলা হয়? টিন এজড অথবা কিশোর কিশোরী, শৈশব টাকে জাস্ট পার করার সাথে সাথেই যখন এই সময় টা আসে, এটাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়ে থাকে।

মূলত এই বয়ঃসন্ধিকালেই প্রতিটা কিশোর-কিশোরীর বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক এবং আচার-আচরণ গত পরিবর্তন গুলো শুরু হতে থাকে। এটা খুব ক্রিটিকাল একটা সময় যখন প্রতিটা কিশোর বা কিশোরী পরিচিত হতে থাকে নতুন নতুন অনুভব, অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদির সাথে।

চিরাচরিত নিয়মে নতুন প্রতিটি জিনিসের প্রতি সবারই কমবেশি আলাদা একটা কৌতুহল থাকে। এ সময়টাতেই প্রথম কারো প্রতি ভালো লাগা, প্রথম কাউকে ভালো বাসা এই ব্যাপারগুলো চলে আসে। এই সময়েই কিছুটা ইগো গ্রো করে, এসময়েই পারিবারিক সহিংসতা মেনে না নিয়ে কিছু একটা করে দেখাবার আবেগ, জেদ ইত্যাদি গড়ে উঠে।

এ সময়ে সকল ধরণের আবেগের সমন্বয় একটা কিশোর অথবা কিশোরী অদ্ভুতভাবে অযৌক্তিক এবং অবুঝ করে তুলে। এমনিতেই তারা সবে শিশু বয়স টাকে পার করে এসেছে, তার সাথে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে এখনো আন্ডার বিল্ড আপ স্টেজ। তো যেটা হয় আসলে, হঠাৎ ভালো লাগা, হঠাৎ খারাপ লাগা অথবা কারন ছাড়াই কষ্ট পাওয়া  ইত্যাদি আবেগের তোড়ে সামনে পিছে কিছু না ভেবেই সবকিছু তারা পালটে দিতে চায়, চায় অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে।

দুনিয়াটা তাদের কাছে এতোটাই রঙিন অথবা এতোটাই অর্থহীন মনে হয়, চাইলেই  ভালো লাগার মানুষের  জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিলো অথবা বাসায় বাবা মায়ের সাথে সামান্য ঝামেলা হয়েছে, পড়াশোনা বন্ধ করে বাসা ছেড়ে বের হয়ে গেলো।

তো এই যে কাউকে না পেয়ে সুইসাইড করা, অথবা বাবা মায়ের সামান্য বকা খেয়েই ঘর ছেড়ে দেওয়া বস্তুতঃ এসব সবকিছু হয় আসলে এই কৈশোরিক আবেগের জন্য। আসল ব্যাপার হলো একটা শিশু কৈশোরে প্রথম যখন পদার্পণ করে, সকল আবেগ আর অনুভূতি গুলো একসাথে নদীর স্রোতের মত তাদের জীবনে চলে আসে, যা অনেকাংশে কিশোর-কিশোরীরা সচেতনভাবে সামাল দিতে পারে না।

আর এজন্যই হয়তো মুরব্বিরা বলে যদি নিজের জীবনে সার্থক হতে চাও এই আবেগের স্রোতে গা ভাসানো যাবে না। বরংচ কীভাবে এই বানভাসী আবেগ থেকে নিজেকে গা বাঁচিয়ে নিতে হয়, তা শিখে নাও ভালো করে।

আবেগ কি শুধু নেতিবাচক, নাকি এর ইতিবাচক দিক ও আছে?

ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি যে আবেগ ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দু’ধরণেরই হতে পারে। নেতিবাচক আবেগ যেমন হিংসা,  রাগ, হতাশা এসবই শুধু আপনার নিজের জীবন না বরংচ আপনার পুরো সাজানো-গোছানো পরিবারটাকে মুহুর্তেই শেষ করে দিতে পারে।

তেমনি ইতিবাচক আবেগ গুলো কিন্তু পারে আপনাকে সুন্দর এবং পরিপূর্ণ একটা জীবন দিতে।

অনেকেই মনে করেন মানুষের আবেগ কম থাকা উচিৎ অথবা একেবারেই  থাকা উচিৎ না।

আরে ভাই, আবেগহীন মানুষের জন্য আর মেশিন কোন পার্থক্য আছে?  আবেগ আছে বলেই তো পৃথিবীটা এখনো এতো সুন্দর। এই আবেগের কারনেই তো পৃথিবীতে প্রেম, ভালোবাসা, দয়া, মায়া, সহানুভূতি, সহমর্মিতা,  শ্রদ্ধাবোধ,  মানবতা এখনো স্বগৌরবে মানুষে মানুষে চর্চা হয়।

ইতিবাচক আবেগ যেমন সুখ, হাসি, মানুষের জন্য মানুষের দয়া মায়া, মানুষের দুঃখে দুঃখী হওয়া ইত্যাদি আছে বিধায়ই তো এখনও মানুষ সামাজিক প্রাণী  হিসেবে একে অপরের সাথে মিলে মিশে টিকে আছে। এই আবেগের জন্যই তো পৃথিবী এখনো সুন্দর, স্বপ্নীল এবং মানুষের বসবাসযোগ্য।

পরিশেষে, 

আপনি অতি আবেগী এটা ভেবে অনর্থক কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই আসলে। আবেগ কোন পার্মানেন্ট অভ্যাস বা আচরণ নয়। এটা আদতেই ক্ষণস্থায়ী এক অনুভব।  এটা এতোটাই ক্ষণস্থায়ী, রেশ টা যখন কেটে যায়, নিজের কাছে নিজেকেই খুব বোকা আর অহেতুক মনে হয়।

আপনি চিন্তা করেন, দুদিন পরপর “আমি এটা কেন করলাম”  এই ভাবনাটা আপনার ভালো লাগে? জানি আপনি কি বলবেন। আপনি বলবেন, না,ভালো লাগে না!

এজন্যই, পরবর্তীতে নিজেকে নিজের কাছে ছোট মনে হওয়া বন্ধ করতে চাইলে আপনার এই আবেগে গা ভাসানোটা  বন্ধ করুন, আর চেষ্টা করুন আপনার নেতিবাচক আবেগের উপর নিজের কন্ট্রোলিং নিয়ে আসতে।

আবেগ থাকা ভালো, কিন্তু বেশি মাত্রায় আবেগ থাকা এবং আবেগ প্রকাশ করা ভালো নয়।নিজেকে বিশ্লেষন করুন কোন কাজ বা জিনিস টা আপনাকে আবেগী করে তোলে , তা বোঝার চেষ্টা করুন , তবেই আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে আপনার পক্ষে সহজ হবে-আবেগের কাছে আপনি পরাজিত হবেন না কখনই ।

আমার কয়েক'টা আটিক্যালের লিংক, এখানে ক্লিক করেই পড়তে পারেন-

কি ভাবে আপনার সন্তানের সাথে সেক্স নিয়ে কথা বলবেন?

ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো

ঝিনুকে মুক্তো হলে চুপ হয়ে যায় মুখ খোলে না!

পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো

পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তুএকটাও খারাপ বাবা নেই, কেন?

Click Here to Leave a Comment Below 0 comments

Leave a Reply: