শুনতে কি পাও?

শুনতে কি পাও তুমি রোজ কবরের ডাক-

হয়েছো কি প্রস্তুত, থাকবে কবরে কতকাল!!

জীবন নামক রেলগাড়ী ছুটে চলেছে রোজ বিভিন্ন উত্থান-পত্তন দিয়ে। কিন্তু এই রেলগাড়ীর শেষ স্টপেজ কোথায় জানেন তো আপনি? জীবন নামক রেলগাড়ীর লাস্ট স্টপেজ হলো কবর। হ্যাঁ কবর, আমাদের  সকলকে নির্ধারিত সময়ের পরে দুনিয়ার সকল কিছু পরিত্যাগ করে সকলেই রওনা দিবে অন্ধকার কবরের বাসিন্দা হওয়ার উদ্দেশ্য।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদত বন্দেগি করে এই ক্ষুদ্র জীবন তারই অনুগ্রহ লাভের আশায় কাটিয়ে দিতে। হ্যাঁ ক্ষুদ্র জীবন, কারন অল্প কিছুদিনের এই দুনিয়া শেষে সবাই পারি জমাবো অন্ধকার কবর নামক এক অনন্ত যাত্রায়

কবরকে আল্লাহপাক দ্বায়িত্ব দিয়েছেন এই মৃত সব মানুষকে নিজের কাছে রাখার জন্য। কবরের আরো দ্বায়িত্ব হলো, নেককার মানুষকে শ্বান্তি এবং আরামদায়ক ভাবে ঘুম পাড়িয়ে রাখা। আর অপরদিকে পাপী মানুষের জন্য কবরের কাজ হলো ভয়াবহ আযাব প্রদর্শন করা।

এই কবর তাই প্রতিদিনই জীবিত মানুষকে তার দিকে ডাকতে থাকে। একবার দুবার নয়, সত্তর বার। কবর তার দ্বায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালনের জন্য ঠিকই অগ্রিম মানুষকে ডাকতে থাকে, কত তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু আমরা কি সেই ডাক শুনি বা আমলে নিই? আমরা কি কবরের আযাবের ভয়ে ভীত হয়ে, জাহান্নাম কে দূরে রাখার প্রয়াসে নিজেদের কে আল্লাহর ইবাদতে সম্পুর্ন সমর্পণ করি? আল্লাহপাক যে দ্বায়িত্ব দিয়ে আমাদেরকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, আমরা কি সেই দ্বায়িত্ব পালন করার জন্য কবরের মতোই অগ্রিম আল্লাহপাককে ডাকতে থাকি? তার ইবাদতে নিজেকে সমর্পণ করি?

কবর কি আপনাকে ডাকছে?

সাখরাতুল মাউত’ বা মৃত্যু যন্ত্রনা সবাইকেই ভোগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “মৃত্যু যন্ত্রনা একদিন আসবেই, আর এটাই থেকে তুমি তো পলায়ন করতে।” সুরা আল-ক্বফ।

মানুষ মারা যাওয়ার পরের যে জীবন শুরু হয়, তার নাম হলো কবরের জীবন। মূলত এই কবর মানুষের শেষ জায়গা নয়। এটি হলো ওয়েটিং প্লেস, যেখান থেকে শুরু আপনার পরকালের অসীম অনন্ত জীবন।

কবর আমাদের রোজ ডাকে। রোজ কতবার করে জানেন? ৭০ বার করে। পাশাপাশি যে উচ্চ স্বরে দুনিয়ার সকল মানুষের কাছে পাঁচটি অনুরোধ করতে থাকে।

-আমি একাকী ঘর-আমার জন্য সংগী হিসেবে কুরআন নিয়ে এসো।

-আমি অন্ধকার ঘর, আমার জন্য রাতের নামাজ বাতি হিসেবে নিয়ে আসো।

-আমি মাটির ঘর, এখানে আসার আগে নেক আমলের বিছানা নিয়ে এসো।

-আমি সাপ-বিচ্ছুর ঘর, এখানে আসার আগে সাপ-বিচ্ছু মারার ওষুধ হিসেবে দান সদকা নিয়ে এসো।

-আমি প্রশ্নের ঘর, এখানে আসার আগে সকল প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কালেমা ও জিকির নিয়ে এসো।

কবরের ডাক আমরা কি শুনতে পাই?

দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত আমরা সবাই।আল্লাহ’র ভয়, কিয়ামতের ভয়, রাসুলের নির্দেশ, কবরের ডাক কোন কিছুই আমরা এখন শুনতে পাই না-এর যে ভয়াবহ পরিণতি তা কি আমরা একবার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করিনা।

জীবন যেহেতু আল্লাহ পাক আমাদের দিয়েছেন, একদিন না একদিন মৃত্যু বরন করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা কি কেউ মৃত্যুকে স্মরণ করি? এই চিরন্তন ধ্রুব সত্য যাকে আমরা কখনো এড়িয়ে যেতে পারবোনা- তাকে নিয়ে যদি বিন্দুমাত্র বিচলিত আমরা যদি হতাম তাহলে আমরা সবাই শুনতে পেতাম কবর কিভাবে আমাদের রোজ ডেকে যাচ্ছে।

ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া অবদি আমাদের সবার চিন্তা থাকে একটাই। আমরা কীভাবে আমাদের ইহজাগতিক জীবন কে আরো সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর করে তুলবো। অথচ আমাদের যে সামনে এক অসীম রাস্তা পারি দিতে হবে কবরের জীবনে অথবা কবর পরবর্তী জীবনে সেটা নিয়ে আমরা কত উদাসীন!

শুনতে কি পাও-কবরের ডাক

উলানিয়া কবরস্হান-বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন 


কবরের ডাক না শোনার ভয়াবহ পরিণতিঃ

কবরের ডাক আপনি শুনেন না, আমলে নেন না, পাত্তা দেন না। তার মানে কি হলো? তার মানে হলো এই দুনিয়ার জীবন আপনাকে মোহমায়ায় আষ্টোপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে। আপনি ঠিকই জানেন আপনার মৃত্যু হবে। আপনার আশেপাশের কেউ যখন মারা যায়, আপনি ঠিকই হাহুতাশ করেন।

কিন্তু আপনি আপনার নিজের জন্য কি করছেন? এই দুনিয়াবি ভোগ বিলাস আপনার জন্য কি কবরের আযাব বন্ধ করতে পারবে?

আপনার মরন নিয়ে আপনি এতো উদাসীন, জীবনকে আপনি উপভোগ করেন, মজা-মাস্তিতে রঙ্গ ভরা জীবন কাটান। কিন্তু কতদিন এভাবে পারবেন?

নাকের ডগার কাছে এসে যখন আযরাইল এসে জান টাকে কবজ করে দিবে, কোথায় যাবেন আপনি? সেই কবরেই যেতে হবে। আর অপেক্ষা করতে হবে রোজ হাশরের ময়দানে নিজের কৃতকর্মের বিচার দেখার জন্য।

যদি কবরের ডাক শুনে সেই অনুযায়ী এই দুনিয়াতেই আমল করেন, আলহামদুলিল্লাহ আপনার জন্য কবর হবে একমুহূর্ত ঘুমের সমান।

আর যদি কবরের ডাককে তোয়াক্কা না করে যা খুশী তাই করে নিজের পাপের পাল্লা ভারি করেন, প্রস্তুত হোন কবর নামক ভয়াবহ আযাবের সাথে প্রতিদিন দেখা করার জন্য। ততদিন পর্যন্ত কবর আপনাকে আযাব দিয়ে যাবে যতদিন না হাশরের ময়দানে আবার সকল কবরবাসীকে পুনরজ্জীবিত করা হবে শেষ বিচারের জন্য।

হায়াত কি দীর্ঘ করা যায়?

আমরা প্রায়শই আমাদের বৃদ্ধ বাবা-মা,  ছেলে মেয়ে অথবা অসুস্থ কোন আত্বীয় স্বজন এর জন্য নামাজের মোনাজাতে দোওয়া করতে থাকি আল্লাহ পাক যেন উনাদের নেক হায়াত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এভাবে দোওয়ার বরকতে কি আল্লাহ পাক সত্যিই কারো হায়াত বাড়িয়ে দেন? চলুন দেখি হাদিসে এই সম্পর্কে কি বলা হয়েছে-

পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, ‘একদিন রাসূলের স্ত্রী উম্মে হাবিবা (রা.) আল্লাহর কাছে দীর্ঘ হায়াত কামনা করে দোয়া করছিলেন, এমন সময় রাসূল (সা.) এসে হাজির হন। তিনি বলেন, তুমি এমন এক বিষয়ের জন্য দেয়া করছ যেটা তিনি আগে থেকেই তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তোমাদের রিজিক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং বণ্টনও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।’

এই যে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলেই আমরা ডাক্তার কবিরাজ সব এক করে ফেলি তাকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু তার যদি হায়াত না থাকে সে কি আর বেঁচে থাকবে? নাহ থাকবে না। আপনি আমি যত কিছুই করিনা কেন, কবরের ডাক তাকে ঠিকই নিয়ে যাবে তার আসল ঠিকানায়।

কবরের আযাব থেকে মুক্তি পেতে কি করা উচিৎ

হজরত বারা বিন আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জনৈক আনসারি সাহাবির জানাযায় শরীক হওয়ার জন্যে বের হলাম। তখনও কবরের খনন কাজ শেষ হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলামুখী হয়ে বসে পড়লেন। আমরাও তাঁর চারপাশে বসে গেলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি কাঠি। তা দিয়ে তিনি মাটিতে খুঁচাতে ছিলেন এবং একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর একবার জমিনের দিকে মাথা অবনত করছিলেন। তিনবার তিনি দৃষ্টি উঁচু-নিচু করলেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাও। কথাটি তিনি দু’বার অথবা তিনবার বললেন

তারপর তিনি এ দোয়াটি করলেন-أَللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউ-জুবিকা মিন আ’জা-বিল ক্ববরি। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।

কাজেই বেশি বেশি কবরকে স্মরণ করুন। কবরের আযাব প্রতিহত করতে  আল্লাহর ইবাদত করুন প্রচুর পরিমাণে , মিথ্যা অন্যায় পাপ ইত্যাদি সকল ধরনের কাজ বন্ধ করুন এবং কবরের আযাব মাফে এই  দোওয়াটি প্রতিদিন বারবার পাঠ করুন।

পরিশেষে,

কবর আমাদের কে প্রতিদিন সত্তর বার ডাকছে তার বাসিন্দা হওয়ার জন্য-এটাই যদি আমি আপনি প্রতিদিন একবার হলেও মনে করি দুনিয়াবি মায়া মোহ সব তখন আমাদের কাছে ফিকে হয়ে যাবে। কবর আমাকে প্রতিদিন ডাকছে, মৃত্যুর পরোয়ানা যে কোন মুহুর্তে আমার নাকের ডগায় চলে আসতে পারে। এই মুহূর্তে আমি যদি মারা যাই, কি নিয়ে যাবো আমি আমার সাথে? কবরের আযাব আমি কিভাবে প্রতিহত করবো? হাশরের ময়দানে কি নিয়ে দাড়াবো রবের সামনে? এইসব চিন্তাই পারে আমাদের কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবার পথ দেখাতে। আমরা কি সেই ডাক শুনি- শুনতে কি পাও?

আমার কয়েক'টা আটিক্যালের লিংক, এখানে ক্লিক করেই পড়তে পারেন-

ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো

পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমে যাবো

ঝিনুকে মুক্তো হলে চুপ হয়ে যায় মুখ খোলে না!

আপনার মৃত বাবা- মা’র জন্য আপনিই দোয়া করুন- কি কি দোয়া ও আমল করবেন?

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি: সুফিবাদ এবং জীবন বদলে দেয়া ১০ উক্তি

Click Here to Leave a Comment Below 0 comments

Leave a Reply: